এড়িয়ে লেখায় যান

সাজ্জাদানশীন

জুলাই 4, 2011

সাজ্জাদানশীন শব্দের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাঃ

যে তার আধ্যাত্মিক গুরু বা পীর ও মুর্শীদ এর পদাংক অনুস্মরন করেন এবং তাঁর পীর ও মুর্শীদ এর পর্দা করার পর সেই স্থলাভিষিক্ত হন তাকেই সাজ্জাদানশীন বলা হবে। সাজ্জাদা শব্দের আক্ষরিক অর্থ এক টুকরা বসার মোছলা বা গালিচা। সাজ্জাদানশীন হলেন নির্দিষ্টভাবে বাছাই করা খলিফা (পীর ও মুর্শীদের মুরীদ) যিনি তার আধ্যাত্মিক গুরু যে গালিচায় বসতেন সেই স্থলাভিষিক্ত হন এবং তার মুর্শীদের ত্বরীকা কে সমপ্রসারণ করেন।

সাজ্জাদানশীন বা জা-নশীন একই অর্থবোধক শব্দ। এই শব্ধাবলী খানকা শরীফে (আধ্যাত্মিক উপসনালয়ে) বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। দরগাহ‌ শরীফ এ যেখানে পবিত্র তীর্থ অবস্থিত, যেখানে আধ্যাত্মিক সাধকের মাযার নির্মিত হয়, সেখানে সাজ্জাদানশীনগনকে দেহ রেখে যাওয়া সাধাকের অনুগামী বলা হয়।।
খাজা মইনুদ্দীন হাসান চিশতী (রাঃ আঃ) (তিরোধান ১২৩৬ খৃষ্ঠাব্দ) তাঁর একজন স্বনামধন্য খলিফা বাবা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার ক্বাকী (রাঃ আঃ) কে তাঁর সাজ্জাদানশীন (আধ্যাত্মিক উত্তরসুরী) পদমর্যাদায় অভিষিক্ত করেন।

বাবা কুতবউদ্দীন বখতীয়ার ক্বাকী (রাঃ আঃ) (অন্তঃর্ধান, ১২৩৭ খৃষ্টাব্দ), যাঁর দরগাহ‌্ দিল্লীর, মেহরুলীতে অবস্থিত, তিনি বাবা ফরিদ মাসুদ গঞ্জ-এ-শাক্কর (রঃ আঃ) কে তাঁর সাজ্জাদানশীন পদ দান করেন।

বাবা ফরিদউদ্দীন গঞ্জ-এ-শাক্কর (রাঃ আঃ) (অন্তর্ধান, ১২৬৬ খৃষ্টাব্দ), যার দরগাহ‌ পাকিস্তানের পাক পওনে অবস্থিত, তিনি হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া (রাঃ আঃ) কে তাঁর সাজ্জাদানশীন নিযুক্ত করেন। হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া (রাঃ আঃ) (আন্তর্ধান, ১৩২৫ খৃষ্টাব্দ) যার দরগাহ দিল্লীতে অবস্থিত তিনি তার সাজ্জাদানশীন পদ অর্পন করেন হযরত নাসিরুদ্দীন চিরাগ-এ-দিল্লীর হাতে।

হযরত নাসিরউদ্দিীন চিরাগ-এ-দিল্লীর (রাঃ আঃ) (অন্তর্ধান, ১৩৫৬ খৃষ্টাব্দ) এর এক শিষ্য মাওলানা যাইনুদ্দীন সুফি নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে তাঁর খলিফাগনের মধ্যে কোন একজনকে সাজ্জাদানশীনের পদ প্রদান করার আর্জি পেশ করলে নাসিরুদ্দীন তার আর্জি খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার খলিফাদের মধ্যে আমি কাউকে সাজ্জাদানশীন পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছি না’।

এভাবেই হযরত খাজা মইনুদ্দীন হাসান চিশ‌তী (রাঃ আঃ) এর প্রদর্শিত পথে নিযুক্ত সাজ্জাদানশীন পরম্পরায়ের অবসান ঘটে।

তথ্যসূত্রঃ 
১। তাকমিলা (সংযোজন) খায়রুল মাজলিস মালফুজাত (বানী) নাসিরউদ্দীন চিরাগ দিল্লী, হামিদ কালান্দার কর্তৃক সংকলিত।
২। সিয়ারুল আরিফিন (সম্রাট হুমাউন এর সমসাময়িক), মাওলানা জামালী, পৃষ্টা ৯৭, প্রকাশকঃ রিজভি প্রেস দিল্লী ।

৩। তারিখে মাশায়েখ চিশ্ত (চিশতী সুফীদের ইতিহাস) লিখেছেন প্রফেসর কে, এ, নিযামী, আলীগড় মুসলীম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর এবং প্রাক্তন সিরিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদুত।